মিসওয়াক করা সম্পর্কে নবী (সাঃ) এর হাদিস ও এর উপকারিতা

মিসওয়াক করার ফযীলত ৭০ গুণ

-----------------------------

১ মিসওয়াক করার ফযীলত ৭০ গুণ :

শরী‘আতে মিসওয়াক করার গুরুত্ব অনেক। তবে মিসওয়াক করার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত উক্ত প্রসিদ্ধ কথাটি জাল।

(أ) عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ r تَفْضُلُ الصَّلاَةُ الَّتِىْ يُسْتَاكُ لَهَا عَلَى الصَّلاَةِ الَّتِى لاَ يُسْتَاكُ لَهَا سَبْعِيْنَ ضِعْفًا.

(ক) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ছালাত মিসওয়াক করে আদায় করা হয়, সেই ছালাতে মিসওয়াক করা বিহীন ছালাতের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী নেকী হয়। বায়হাক্বীসুনানুল কুবরা হা/১৫৯১ম খন্ডপৃঃ ৬১-৬২হাকেম হা/৫১৫ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩৭মিশকাত হা/৩৮৯পৃঃ ৪৫বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৯২/৭৬ পৃঃ

তাহক্বীক্ব : ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন,

وَقَدْ رَوَاهُ مُعَاوِيَةُ بْنُ يَحْيَى الصَّدَفِىُّ عَنِ الزُّهْرِىِّ وَلَيْسَ بِالْقَوِىِّ وَرُوِىَ مِنْ وَجْهٍ آخَرَ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ وَمِنْ وَجْهٍ آخَرَ عَنْ عَمْرَةَ عَنْ عَائِشَةَ وَكِلاَهُمَا ضَعِيْفٌ وَفِىْ طَرِيْقِ الْوَجْهِ الْآخِرِ عَنْ عُرْوَةَ الْعَاقِدِىِّ وَ هُوَ كَذَّابٌ.

মু‘আবিয়া ইবনু ইয়াহইয়া যুহরী থেকে বর্ণনা করেছে। সে নির্ভরযোগ্য নয়। অন্য সূত্রে উরওয়া আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু তারা উভয়েই যঈফ। অন্য সূত্রে উরওয়া আক্বেদী থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু সে মিথ্যুক। আলবানীমিশকাত হা/৩৮৯-এর টীকা দ্রঃ১/১২৪ পৃঃ
 (ب) رَكْعَتَانِ بِسِوَاكٍ أَفْضَلُ مِنْ سَبْعِيْنَ رَكْعَةً بِغَيْرِ سِوَاكٍ.

(খ) মিসওয়াক করে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা- মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাক‘আত ছালাত পড়ার সমান। মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/১৮০৩মুসনাদে বাযযার ১/২৪৪ পৃঃ

উল্লেখ্য, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্দালভী প্রণীত ‘মুন্তাখাব হাদীস’ গ্রন্থে ফযীলত সংক্রান্ত অনেক জাল বা মিথ্যা হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত বর্ণনাটি তার অন্যতম। মুন্তাখাব হাদীসঅনুবাদ : মাওলানা মুহাম্মাদ সাআদ (ঢাকা : দারুল কুতুবদ্বিতীয় প্রকাশ : আগস্ট ২০১০)পৃঃ ২৯৯

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। ইমাম বাযযার বলেন, এর সনদে মু‘আবিয়া নামে একজন রাবী রয়েছে। সে ছাড়া আর কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেনি। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়া মুহাম্মাদ ইবনু ওমর নামে আরেকজন রাবী রয়েছে। সে মিথ্যুক। لا نعلم رواه إلا معاوية قلت وهو الصدفي قال الحافظ ضعيف সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫০৩-এর ভাষ্য দ্রঃযঈফুল জামে‘ আছ-ছাগীর হা/৩১২৭

(ج) عَنْ زَيْدِ بنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ مَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ r يَخْرُجُ مِنْ ِشَيْءٍ مِنَ الصَّلَوَاتِ حَتَّى يَسْتَاكَ.

(গ) যায়েদ ইবনু খালেদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, মিসওয়াক না করে রাসূল (ছাঃ) কোন ছালাতের জন্য বাড়ী থেকে বের হতেন না। ত্বাবারাণী হা/৫২৬১মুন্তাখাব হাদীসপৃঃ ৩০০

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৪৩

(د) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ فِى السِّوَاكِ عَشْرُ خِصَالٍ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ تَعَالَى وَمَسْخَطَةٌ لِلشَّيْطَانِ وَمَفْرَحَةٌ لِلْمَلاَئِكَةِ جَيِّدٌ لِلَّثَةِ وَيُذْهِبُ بِالْحَفْرِ وَيَجْلُو الْبَصَرَ وَيُطَيِّبُ الْفَمَ وَيُقَلِّلُ الْبَلْغَمَ وَهُوَ مِنَ السُّنَّةِ وَيَزِيْدُ فِى الْحَسَنَاتِ.

(ঘ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, মিসওয়াকের ১০টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি (২) শয়তানের অসন্তুষ্টি (৩) ফেরেশতাদের জন্য আনন্দ (৪) আলজিভের সৌন্দর্য (৫) দাঁতের আবরণ দূর করে (৬) চোখকে জ্যোতিময় করে (৭) মুখকে পবিত্র করে (৮) কফ হরাস করে (৯) এটি সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত (১০) নেকী বৃদ্ধি করে। দারাকুৎনী ১/৫৮সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬৯/২১ পৃঃফাযায়েলে আমল (বাংলা) ফাযায়েলে নামায অংশপৃঃ ৬৮-৬৯

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি নিতান্তই যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, মু‘আল্লা ইবনু মাঈন দুর্বল ও পরিত্যক্ত রাবী। مُعَلَّى بْنُ مَيْمُوْنٍ ضَعِيْفٌ مَتْرُوْكٌ দারাকুৎনী ১/৫৮সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬৯/২১ পৃঃ

(ه) عَنِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ r قَالَ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ وَمَجْلاَةٌ ِللْبَصَرِ.

(ঙ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী, প্রতিপালকের সন্তুষ্টির কারণ ও চোখের জন্য জ্যোতিময়। ত্বাবারাণীআল-মুজামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী বলেন, হারিছ বিন মুসলিম ছাড়া বাহরে সিক্বা থেকে অন্য কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেননি। لم يرو هذا الحديث عن بحر السقاء إلا الحارث بن مسلم –আল-মুজামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৭৬

মিসওয়াক করার পদ্ধতি
--------------------------

রাসূলুল্লাহ  যাইতুন ও খেজুর গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করেছেন। তাই এই দুটো হলে উত্তম। এছাড়া তিক্ত স্বাদযুক্ত গাছের ডাল হলেও ভাল। মেসওয়াক কাচা ও নরম গাছের ডাল হওয়া উচিত, এতে মিসওয়াকে বাড়তি ফায়দা হাসিল হয়।

মিসওয়াক নিজ হাতের আঙ্গুলের মত মোটা ও এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত। এতে মিসওয়াক করতে যেমন সুবিধা হবে তেমনি বেশী ফায়দাও পাওয়া যাবে।

মিসওয়াক ধরার পদ্ধতি হল, ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি মেসওয়াকের নিচে থাকবে। মধ্যমা ও তর্জনী উপরে ও বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচে রেখে মিসওয়াক ধরা। এতে করে মুখের ভিতর ভালভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেসওয়াক করা যায়। এপদ্ধতিটি  ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত আছে।

মিসওয়াক করার মাসনূন পদ্ধতি হল, মুখের ডান দিক থেকে শুরু করা এবং উপর থেকে নিচে মেসওয়াক করা। আড়াআড়ি ভাবে না করা। মিসওয়াক করার সময় দাঁতের ভিতর বাহির সহ মইসওয়াক করা এবং জিহবাও গোড়া পর্যন্ত মিসওয়াক করা।

মিসওয়াসের মাঝে দুটি বিষয় সুন্নত, এক. মুখ পরিষ্কার করা। দুই. গাছের ডাল হওয়া। তাই গাছের ডাল ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে দাঁত মাজলে একটি সুন্নত আদায় হবে। অপরটি হবে না। সুতরাং মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল ও শুকনো কাপড় দ্বারাও মইসওয়াক করা যেতে পারে। ব্রাশের মাধ্যমেও দাঁত মাজা যেতে পারে।

ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর ও ঘুমানোর পূর্বে, নামাজের আগে, মজলিসে উপস্থিত হবার পূর্বে, কুরআন ও হাদীস পাঠের পূর্বে, খাওয়ার পর মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।

Comments

Post a Comment