ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? | What is Cryptocurrency in Bangla?


আজকে আমরা আধুনিক বিশ্বের এক অত্যাধুনিক টেকনলজি ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) সম্পর্কে আলোচনা করবো।😊

তো বন্ধুরা এই বিজ্ঞানের যুগে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে প্রতিনিয়ত।আর প্রতিনিয়ত কি যে অদ্ভুত অদ্ভুত প্রযুক্তির আবিষ্কার ঘটে চলেছে সে সম্পর্কে আদৌ আমরা কতটুকু জানি সেটাও হয়ত আমরা জানি না।😁তবে ইদানিং সবচেয়ে প্রচলিত কিছু বিষয়ের মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) বেশ জনপ্রিয়।তবে দুঃখের বিষয় এই অতি জনপ্রিয় প্রযুক্তিটির সাথে আমরা অনেকেই একদমই অপরিচিত।তবে কিছু কৌতুহলী মানুষ আছেন যাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগে যে ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং এ সম্পর্কে জানতে তারা ইন্টারনেটে অনেক ঘাটাঘাটি করেন।

তাই সেই কৌতুহলি মানুষগুলোর জন্য আমি ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব আমার পক্ষে আমি ততটুকু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।তাই আশাকরি আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।কারণ এতে প্রত্যেকটা শব্দ,প্রত্যেকটা লাইন থেকে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে নতুন নতুন কিছু ধারণা লাভ করতে পারবেন।তবে আলোচনা শুরুর পূর্বে চলুন দেখে নেই এই আর্টিকেলটিতে আমরা মূলত কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তার তালিকা⬇

  • ক্রিপ্টোকারেন্সি কি?
  • ক্রিপ্টোকারেন্সির উৎপত্তি
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি উৎপাদন
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন পদ্ধতি
  • জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি সমূহ
  • এর ভালো এবং খারাপ দিকসমূহ
  • বাংলাদেশে এর বৈধতা

# ক্রিপ্টোকারেন্সি কি?


ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) মূলত একটি ইংরেজী শব্দ যাকে আমরা দুটি ভাগ করলে প্রথমে পাই ক্রিপ্টো (Crypto) এবং পরে পাই কারেন্সি (Currency) আর মুলত কারেন্সি মানে হচ্ছে মুদ্রা।আমরা যারা কম্পিউটার বা মোবাইলে বিভিন্ন ফাইল বা ফোল্ডার নিয়ে কাজ করি তারা হয়তো অনেকেই এনক্রিপশন (Encryption) এবং ডিক্রিপশন (Decryption) শব্দদুটির সাথে পরিচিত থাকবো।মূলত ক্রিপ্ট (Crypt) শব্দটি থেকে ক্রিপ্টো (Crypto) শব্দটা নেওয়া হয়েছে।

আবার এনক্রিপশন এবং ডিক্রিপশন শব্দদ্বয়ও এসেছে ক্রিপ্ট শব্দ থেকে।এখন ক্রিপ্টের শাব্দিক অর্থ আমি ইন্টারনেট থেকে খোজাখুজি করে যতটুকু জানতে পেরেছি যে এর ধারা ভূগর্ভস্থ কোন ঘর কে বোঝানো হয় অর্থাৎ যেখানে তথ্য লুকায়িত থাকে এই তথ্যটা চুরি করা সম্ভব না।এটা অন্য কেউ দেখতে পারবেনা।

আর আমরাঅনেকেই হয়তো জিপ (.zip) ফাইল সম্পর্কে জেনে থাকবো।আমরা বিভিন্ন ফাইল কে কম্প্রেস করে তারপর জিপ ফাইলে রুপান্তর করি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখি যাতে অন্য কেউ এই ফাইলটা খুলতে না পারে।মূলত ডাটাগুলোকে অন্যদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এবং ডাটা চুরি হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এনক্রিপশন করা হয়।আর এই ডাটাকে পরবর্তীতে যদি আমরা দেখতে চাই তখন সেটাকে আমরা ডিক্রিপশন করে আবার পুনরায় আমাদের কাজে লাগাতে পারি।


মূলত ক্রিপ্টো দিয়ে বোঝানো হচ্ছে এনক্রিপশন কে অর্থাৎ এটি একটি এনক্রিপটেড কারেন্সি আর কারেন্সি মানে হচ্ছে মুদ্রা সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে এটি একটি এনক্রিপটেড মুদ্রা।যা নিরাপদ হ্যাকিং থেকে এবং চুরি হওয়া থেকে।তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে এক প্রকারের ভার্চুয়াল কারেন্সি (Virtual Currency) অথবা এমন এক মুদ্রা যা বাস্তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে।যা সম্পূর্ণ হিসাব-নিকাশ ইন্টারনেটে এবং আদান-প্রদানও।এর অস্তিত্ব শুধুমাত্র ইন্টারনেটেই রয়েছে এবং এর বাইরে এর কোনো অস্তিত্ব নেই।তাই আপনি আপনার মানিব্যাগে এই মুদ্রা তো কোনোভাবেই রাখতে পারবেন না 😁😁

ক্রিপ্টোকারেন্সি মূলত peer-to-peer মুদ্রা লেনদেন ব্যবস্থা অর্থাৎ এক্ষেত্রে আপনি যার সাথেএই ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রার লেনদেন করবেন একমাত্র সেই ব্যক্তি এবং আপনি ব্যতীত আর কেউ তা জানতে পারবে না।এমনকি আপনি নিজেও জানবেন না যে আপনি তাকে টাকা দিচ্ছেন এবং সেই ব্যক্তি জানবেনা সে আপনাকে টাকা দিচ্ছে,এই ব্যবস্থাটা এতটাই গোপন এবং নিরাপদ।তাছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।এই ক্রিপ্টোকারেন্সির মান প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমাণে ওঠানামা করে।এমনকি এর মান এক সময় ২০,০০০ মার্কিন ডলার এ পরিণত হয়েছিল কিন্তু অতঃপর তা আবার অনেক নিচে নেমে আসে।তাই এর নির্দিষ্ট কোনো মান নেই।এর মানের বাজারদরের পরিবর্তন ঘটে এই ক্রিপ্টোকারেন্সির উৎপাদনের উপর।ইনশাল্লাহ এ বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হবে।

# ক্রিপ্টোকারেন্সির উৎপত্তি

ক্রিপ্টোকারেন্সি কে তৈরি করেছে এই বিষয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে।আমেরিকানরা বলে তাদের এক ক্রিপ্টোগ্রাফার এই মুদ্রার প্রচলন ঘটায় আবার জাপানিরা বলে যে তাদের দেশের এক নাম জানা তবে অপরিচিত এক ব্যক্তি একটি কারেন্সি প্রচলন শুরু করে।তবে আমি উইকিপিডিয়ায় এবং অন্যান্য কিছু জায়গা থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি সে অনুযায়ী ১৯৯৩ সালে আমেরিকান ক্রিপ্টোগ্রাফার ডেভিড চম - ই-ক্যাশ (E-Cash) নামে একটি ডিজিটাল পেমেন্ট/লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করার চিন্তাভাবনা করেন।পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে তিনি ডিজিক্যাশের সহযোগিতায় এই ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থাকে বাস্তব রূপ দেয়ার চেষ্টা করেন।তবে জানা যায় যে তিনি শেষ পর্যন্ত সফলভাবে সেটা করতে পারেননি।আবার এটাও জানা যায় যে জাপানের সাতোসি নামাকাতো নামের এক ব্যক্তি অথবা গ্রুপ সফলভাবে এই ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাটি প্রচলন শুরু করেন যা বিটকয়েন (Bitcoin) নামে পরচিত।তবে এই সাতোসি নামাকাতো (Satosi Namakato) নামক ব্যক্তিটি আসলে কে,সে বিষয়ে আজ অবধি কেউ জানেনা।এই ব্যক্তির না কোন ছবি আছে আর না আছে অন্য কোন তথ্য।শুধু নামটাই জানা আছে।তবে হয়তো একসময় এ বিষয়ে গবেষণা করতে করতে আরও অনেক তথ্য জানা যাবে তবে সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

# ক্রিপ্টোকারেন্সি উৎপাদন

ক্রিপ্টোকারেন্সি উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণটাই হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ যেহেতু এই মুদ্রার বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নাই সেহেতু এর উৎপাদনও বাস্তবে করা হয় না।করা হয় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে,আর এই ক্রিপ্টোকারেন্সির উৎপাদনকে বলা হয় মাইনিং (Mining) আর যারা এই উৎপাদন করে থাকে তাদের বলা হয় মাইনার (Miner)। 


ক্রিপ্টোকারেন্সি উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজন হয় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটারের এবং এই কম্পিউটারগুলো তাদের জিপিইউ (GPU) অর্থাৎ গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (Graphics Processing Unit) এর মাধ্যমে এই কাজটা করে থাকে।ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং এর ক্ষেত্রে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়,তাই যে দেশে বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি সে দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করা মোটেও লাভজনক নয়।মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সি যারা মাইন করে অর্থাৎ যারা মাইনার তারা আমাদের প্রত্যেকটা ট্রানজেকশন কে অর্থাৎ ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনকে ভেলিড (Valid) করে অথবা এর সঠিকতা যাচাই করে বা ভ্যালিডিটি চেক করে অর্থাৎ যখন আমরা peer-to-peer লেনদেন করি অর্থাৎ এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সি আদান-প্রদান করা হয় তখন সেই আদান-প্রদান সম্পর্কিত সকল তথ্য চলে যায় সেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটারের সিস্টেম  তখন সেই আদান-প্রদান টি আদৌ সঠিক কিনা সেটা যাচাই করা হয় এই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে আর সেটা করেন এই মাইনাররা।

# ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন পদ্ধতি


আগেই বলেছি যে ক্রিপ্টোকারেন্সি হচ্ছে একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা।তাই এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু টেকনোলজির সাহায্য নিতে হবে যেখানে আপনি এই ভার্চুয়াল বা ডিজিটাল মুদ্রা গুলো জমা করতে পারেন।আর একে বলা হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট আর এই ওয়ালেট গুলোর মধ্যেই আপনার কাছে থাকা ক্রিপ্টোকারেন্সির গাণিতিক পরিমান জমা থাকে।আর প্রত্যেকটা ওয়ালেটের একটা নির্দিষ্ট ঠিকানা বা এড্রেস (Address) থাকে যেটা দেখতে অনেকটা আজেবাজে ইংরেজি এবং সংখ্যায় মিলিত অর্থহীন বাক্যের মতো।

আর যখন কেউ কাউকে ক্রিপ্টোকারেন্সি পাঠায় বা যখন একজনের সাথে আরেকজনের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন হয় ট্রানজেকশন হয় তখন প্রেরক ব্যক্তির ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট থেকে সরাসরি প্রাপক ব্যক্তির ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটে লেনদেনের পরিমাণ টা চলে যায়।এই দুজনের মাঝখানে কোন তৃতীয় ব্যক্তি বা তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো হাত থাকেনা বা থাকেনা কোনো নিয়ন্ত্রণ।তাই এই ক্ষেত্রে লেনদেন টা খুবই সুবিধাজনক এবং নিরাপদ হয়।শুধুমাত্র প্রাপক প্রেরক এর মধ্যেই হয় এ লেনদেন।

উদাহরণঃ iwvwa82y36w9avHw9w7fww8qgqnwisg37qq0wgi 
আমি আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে উপরে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট এর এড্রেস কি রকম হয় সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছি।তবে আদোও এরকম কোন এড্রেস আছে কিনা সেটা আমি জানিনা।তাই আপনাদের যদি কারো ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট থেকে থাকে তাহলে আবার এখানে টাকা পাঠিয়ে দিবেন না 😁 আর দিলে সেটা আপনার ব্যক্তিগত দায়িত্ব।

যাইহোক,মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের বিষয়টা অত্যন্ত সিকিউরিটির সাথে অর্থাৎ নিরাপত্তার সাথে সংঘটিত হয় আর এই পুরো ট্রানজেকশন (Transaction) অথবা লেনদেনটাই হয় একটা ব্লকচেইন (Blockchain) পদ্ধতিতে যা অত্যন্ত নিরাপদ একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু ↙

# ব্লকচেইন কি?

ব্লকচেইন হচ্ছে মূলত কতগুলো ডিজিটাল ব্লকের (Digital Block) একটা চেইন বা সমষ্টি ।আর এই Block গুলো হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রানজেকশন অথবা লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত তথ্যসমূহের একটা বান্ডেল অথবা প্যাকেট।আর এই প্যাকেটগুলোই হচ্ছে ব্লক।ব্লক গুলো আসলে আমরা যেই ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনগুলো করে থাকি সেই লেনদেনের সময়,তারিখ,লেনদেনের পরিমাণ এবং লেনদেনকারীদের আইডেন্টিটি (Identity) অথবা পরিচিতি ইত্যাদি তথ্য বহন করে।তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে তথ্যটি একটা ব্লক বহন করে সেটা হচ্ছে হ্যাশ (Hash) যা আসলে এক প্রকার ক্রিপ্টোগ্রাফিক্স কোড (CryptoGraphics Code) যা তৈরি করা বিশেষ অ্যালগরিদম এর মাধ্যমে।আর প্রত্যেকটা ব্লকের আলাদা আলাদা hash রয়েছে যার দ্বারা একটা block অন্য আরেকটা block থেকে আলাদা হতে পারে।


Image Source : everteam.com

আর লেনদেনকারীর আইডেন্টিটি বা পরিচিতি'টি মূলত আপনার আসল পরিচয় নয় বরং ডিজিটাল ভাবে তৈরি একটি  ডিজিটাল সাইন (Digitak Sign) ।হতে পারে সেটা কোন ইউনিক ইউজারনেম অথবা অন্য কিছু যাইহোক।এইযে block গুলো আমাদের ট্রানজেকশন বা লেনদেনের তথ্য বহন করে এবং ব্লকচেইন এ যুক্ত হয় এই যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও কিন্তু রয়েছে এবং রয়েছে কিছু শর্ত,যে শর্তগুলো মানলেই কেবল একটা ব্লক ব্লকচেইন এর মধ্যে যুক্ত হতে পারে।

শর্তগুলোর মধ্যে প্রথমেই হচ্ছে আমাদের 
  • ট্রানজেকশন বা লেনদেন অবশ্যই সংঘটিত হতে হবে
  • ট্রানজেকশন টা ব্লকে স্টোর হতে হবে
  • ট্রানজেকশন ব্লক টি ভেরিফাইড হতে হবে
  • ব্লকটির একটি অনন্য বা ইউনিক হ্যাশ (Hash) থাকতে হবে
এই শর্তগুলো মানলেই কেবল একটা ব্লক ব্লকচেইন এর সাথে যুক্ত হতে পারে।আর যখন কিনা কোন একটা ব্লক ব্লক চেইন যুক্ত হয় তখনই এই ব্লকের সমস্ত তথ্য যেমন সময় (Transaction Time) লেনদেনের পরিমাণ (Transaction Amount) হ্যাশ (Hash) ইত্যাদি তথ্য সকলের কাছে উন্মুক্ত যায় অর্থাৎ এই তথ্যটা বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেও দেখতে পারবেন।তবে আগেই বলেছি যে এক্ষেত্রে লেনদেন কারীদের পরিচয় তাদের আসল পরিচয় নয় বরং তাদের একটা ডিজিটাল আইডেন্টিটি যা মাইনিং কম্পিউটারের সিস্টেমগুলো তৈরি করে থাকে তাদের অ্যালগরিদম এর মাধ্যমে।আর এই ব্লকচেইন গুলো এতই সিকিওর (Secure) বা নিরাপদ হয় যে এর মধ্যে কোন তৃতীয় ব্যক্তি অথবা হ্যাকার কোনভাবেই অন্য কোন ব্লক প্রবেশ করাতে পারবে না অথবা চাইলেই এই ব্লকচেইন থেকে কোন একটা ব্লক কে তারা বের করতে পারবেনা।কারণ এই ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা ব্লকের ভ্যালিডিটি চেক করা হয় এবং তার পরই কেবল কোন একটা ট্রানজেকশন সম্পন্ন হয়।

# জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি সমূহ

ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় যে ক্রিপ্টোকারেন্সিটি রয়েছে সেটি হচ্ছে বিটকয়েন (Bitcoin) ।হয়তোবা এর নাম শুনে থাকবেন।তবে বিটকয়েনের এত জনপ্রিয়তা তার ফলেই ধীরে ধীরে আরো অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সির উৎপত্তি হয়।প্রায় বলা যায় হাজারের মতো অথবা তার চেয়ে বেশি।তবে বহুল পরিচিত এবং ব্যবহৃত ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর মধ্যে রয়েছে - 
  • বিটকয়েন (BTC/Bitcoin)
  • ইথেরিয়াম (ETH/Ethereum)
  • টেথার (USDT/Tether)
  • এক্স আর পি (XRP)
  • বিটকয়েন ক্যাশ (BCH/Bitcoin Cash)
  • লাইটকয়েন (LTC/Litecoin) 

# ক্রিপ্টোকারেন্সির ভালো এবং খারাপ দিকসমূহ


মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সির আবিষ্কারে বেশ ভালই হয়েছে।কারণ এক্ষেত্রে আমাদের নিরাপত্তা অনেকটাই বেড়েছে লেনদেনের ক্ষেত্রে।তাছাড়া যেহেতু এখানে তৃতীয় পক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই তাই আমাদের লেনদেনের সময় কোন বাড়তি ট্যাক্স দিতে হয় না।আর যেহেতু এই টাকাটা আমাদের পকেটে বহন করতে হয় না তা বহনযোগ্যতাও ভালো। তাছাড়া বর্তমানে মাইক্রোসফট এবং আরো অনেক কোম্পানিগু তাদের প্রোডাক্ট গুলোকে বিটকয়েনের মাধ্যমে বিক্রি করছে
তাই বলা যায় যে ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণযোগ্যতাও দিন দিন বাড়ছে।

তবে ভালো দিকগুলোর তুলনায় এর মন্দ দিকটাই একটু বেশি।কারণ প্রথমত ক্রিপ্টোকারেন্সি একটা ভার্চুয়াল মুদ্রা যার বাস্তবে নেই কোনো অস্তিত্ব।আর এটির হিসাব-নিকাশ সম্পুর্ণটাই হয় আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে।যেখানে শুধু এর গাণিতিক পরিমাণটাই থেকে যায়।তাই যদি কখনো তাদের কম্পিউটার সিস্টেম খারাপ হয়ে যায় তাহলে আপনার সম্পূর্ণ ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিমাণটা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা একদমই এড়ানো যায়না।তাছাড়া যদিও ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং এর ট্রানজেকশন ব্যবস্থা খুবই সিকিওর,কিন্তু দিন দিন টেকনোলজি অনেক উন্নত হচ্ছে এবং বাড়ছে হ্যাকিংয়ের ভয়।আর যেহেতু এ ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পূর্ণটাই থাকে আপনার কম্পিউটারে তাই হ্যাকিং হবে না সেটাও বলা যায়না।তাছাড়া এরকম না যে হ্যাক হতে পারে বরং প্রতিনিয়ত এরকম হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটে চলেছে আর এভাবে অনেকেই অনেকের প্রচুর পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি হারিয়েছে।

তাছাড়া আরেকটা সমস্যা হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সির মানের উপর যেহেতু কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই তাই এই ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলোর মানের প্রচুর ওঠানামা হয়।তাই এই ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলোর মান কখন যে আকাশচুম্বী হয়ে যাবে আবার কখন যে এর মান একদমই কমে যাবে সেটা কেউ বলতে পারে না।তাই যদি কেউ ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ করে ব্যবসা করে তাহলে লাভ কতটুকু হবে জানিনা তবে হঠাৎ করেই ব্যবসাতে লস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই রয়েছে।

আবার আপনারা এটাও জেনেছেন যে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন হয় peer-to-peer অর্থাৎ একজনের সাথে আরেকজনের।আর লেনদেন হয় সরাসরি একজনের ওয়ালেট থেকে আরেকজনের ওয়ালেটের এড্রেসে আর বাকি সব তথ্য হয় অ্যানোনিমাসলি (Anonymously) অর্থাৎ নামহীনভাবে।মানে আপনি যাকে টাকাটা পাঠাবেন শুধু তার ওয়ালেট এড্রেস ছাড়া আপনি তার আর কোন তথ্য জানতে পারবেন না এমনকি ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রেও আপনার ওয়ালেয়াত এড্রেস ব্যাতিত আর কোনো তথ্য জানা সম্ভব না।তাই যদিও আমাদের দেশে ভুল করে বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দিলে ফোন করে সেটা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু এক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনাটাও নেই।😁

তাছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলোর লেনদেন যেহেতু একদমই অপরিচিত ভাবেও করা যায় সে ক্ষেত্রে বর্তমানে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি এর মাধ্যমে অস্ত্র বেচাকেনা আরো অনেক বেআইনি কাজও ঘটে চলেছে।তাছাড়া আমি এটাও জানতে পেরেছি যে বিভিন্ন জংগী সংস্থাগুলোও নাক ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে চাচ্ছে।

তাছাড়া এর ওপর কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা দেশের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই  তাই একে  বৈধ মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পূর্বে অনেক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে যা হতে পারে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য।তাই এর উপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখনো নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে যদিও কিছু কিছু বড় বড় কোম্পানি ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ করছে এবং তাদের পণ্যও বেচাকেনা করছে।

এমনকি এটাও জানা গেছে সাম্প্রতিক তথ্য থেকে যে ফেসবুকও তাদের নিজস্ব ক্রিপ্টো কারেন্সি বের করতে চলেছে।কিন্তু এখন অব্দি কোন দেশ একে বৈধ মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তাই এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ করে ব্যবসা করা অথবা এর লেনদেন করা কোনটাই কোন দেশেই বৈধ হবে না।তাই এতে আপনি লস করুন অথবা হ্যাকিংয়ের শিকার হন আপনি আইনগতভাবে কোন দেশেই কোন ব্যবস্থা নিতে পারবেন না।কারণ আপনি নিজেই বেআইনী কাজ করছেন।

# বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈধতা

বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই ক্রিপ্টোকারেন্সি কে বৈধ মুদ্রা হিসেবে অনুমতি দেয়া হয়নি।আর বাংলাদেশেও এর অনুমতি নেই,কারণ এই ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন হ্যাকিং,বেআইনি কাজ,অস্ত্র পাচার,জঙ্গিবাদ ইত্যাদি বিভিন্ন ভয়ঙ্কর বিষয়।বাংলাদেশ ব্যাংক 2014 সালে তাদের ওয়েবসাইটে একটি Warning Notice প্রকাশ করেন এবং পরবর্তীতে 2017 সালের আরেকটি ওয়ার্নিং নোটিস প্রকাশ করেন যেগুলোতে মূলত এই ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে কেউ যাতে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি আদান-প্রদান না করেন।


কেননা এই আদান-প্রদানে কারো কোনো পরিচিতি পাওয়া যায়না,তাই কে কি করছে কোন কারণে করছে এবং কার কাছে লেনদেন করছে সে সম্পর্কে কোন কেও কোন তথ্য পাবে না।তাই কেও বেআইনি কাজ করলেও হয়তোবা তাদের ধরা সম্ভব না।সর্বোপরি বলা যায় যে বাংলাদেশ এখনও একে বৈধ মুদ্রা হিসেবে অনুমতি দেয়া হয়নি।তাই যদি কেউ এই ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করা অবস্থায় ধরা পড়ে তাই অবশ্যই বাংলাদেশ তার উপর আইনি ব্যবস্থা নেবে।

আশাকরি আপনি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা লাভ করতে পেরেছেন এবং এটাও জানতে পেরেছেন যে ক্রিপ্টোকারেন্সির ভালো এবং খারাপ দিক গুলো এবং বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে এর বৈধতা কতটুকু।তাই আমি আপনাদের অনুরোধ করব আপনারা এই ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে দূরে থাকবেন।আমার এই আর্টিকেলটি লেখার উদ্দেশ্য ছিল আপনাদেরকে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে জানানো,যাতে আপনারা অজ্ঞতার বসে কোন ভুল কাজ না করে বসেন।তাই সতর্ক থাকুন,বেঁচে থাকুন অবৈধ কাজ গুলো থেকে এবং নিরাপদে থাকুন।😊

মানুষ মাত্রই ভুল হয় তাই আমার এই আর্টিকেলটিতেও হয়তোবা কোন ভুল থাকতে পারে।সে ভুলের জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।তবে আপনাদের পক্ষে যদি সম্ভব হয় তাহলে এই ভুলগুলো সম্পর্কে আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাবেন।আর আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো সেই ভুলগুলো শুধরে নেবার।

আল্লাহ হাফিজ

Comments