কম্পিউটার নাকি ল্যাপটপ? কোনটা কিনলে ভালো হবে?


🤔🤔 ল্যাপটপ কিনবো নাকি ডেস্কটপ কিনব?কোনটা ভালো হবে?

😁😁 আরে ভাই ল্যাপটপ তো যেখানে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায় কিন্তু কম্পিউটার তো বিশাল বড় এটা নিয়ে কই দৌড় পারবো?

কিন্তু ভাই ল্যাপটপ তো তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়।🤓


এরকম অনেক প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে যখন আমরা কম্পিউটার কেনার আইডিয়া টা মাথায় নেই অর্থাৎ যখনই আমরা কেউ কম্পিউটার কিনতে চাই অথবা ল্যাপটপ কিনতে চাই সে সময় এরকমই নানান অদ্ভুত প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।

তাইআজকে আমরা এই কম্পিউটার এবং ল্যাপটপের তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে তাদের সুবিধা-অসুবিধা এবং পারফরমেন্সের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করব যে ল্যাপটপ কিনব নাকি কম্পিউটার কিনব।তাই চলুন যুদ্ধ শুরু করা যাক।

তুলনার বিষয়সমূহঃ

  • কোন ধরনের কাজ করবেন
  • বহনযোগ্যতা
  • পার্ফরমেন্স
  • দাম
প্রথমতঃ আসি কাজের ধরন অনুযায়ী আপনার জন্য কম্পিউটার নাকি ল্যাপটপ ভাল হবে সে বিষয়ে।তো আপনি যদি গেমিং (Gaming) এর জন্য কিনতে চান তাহলে আমি প্রথমেই বলব কোনমতেই আপনি ল্যাপটপ কিনতে যাবেন না।কারণ গেমিং এর জন্য এটা সবচেয়ে বাজে প্রফরমেন্সের ডিভাইস।কারণ এটা আপনাকে ওই পরিমাণ পারফরম্যান্স দিতেই পারবে না যা গেমিংয়ের মজা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন।

তবে হ্যা আপনি যদি অনেক বাজেট সম্পন্ন হন অর্থাৎ লাখ টাকার উপরে খরচ করতে পারেন তাহলে সেক্ষেত্রে হয়তো বা আপনি ভালো গেমিং ল্যাপটপ পেতে পারেন।তবে তার পরেও তুলনামূলকভাবে কম্পিউটারের মতো এটা তেমন ভাল পারফরম্যান্স দেবে না।

দ্বিতীয়তঃ আপনি যদি ভিডিও এডিটিং,গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি হার্ডকোর কাজ করার জন্য কিনতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রেও আমি বলব ল্যাপটপ কিনবেন না।কারণ এক্ষেত্রেও ল্যাপটপ থেকে ডেস্কটপের পারফরম্যান্স অনেক ভালো হবে।আর আপনি ল্যাপটপ কিনতে চাইলে এক্ষেত্রে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনের ক্ষেত্রে হয়তো একই আর্কিটেকচারের বা একই ধরনের ল্যাপটপ পেলেও একই ধরনের পারফরম্যান্স আপনি তেমন ভালো পাবেন না।

তবে যদি আপনি কলেজের বা স্কুলের বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট করার জন্য,মাইক্রোসফট অফিসের বিভিন্ন কাজ করার জন্য বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ভিডিও সার্ফিং করার জন্য কিনতে চান তবে সে ক্ষেত্রে ল্যাপটপই ভালো হবে কারণ।ল্যাপটপ এতোটুকু পারফরম্যান্স আপনাকে দিতে পারবে।অর্থাৎ যদি আপনি চান ল্যাপটপ কিনবেন আর যদি আপনার কাজের ধরন হয় এরকম ছোটখাটো কাজ,অল্প সময়ে কাজ করবেন সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য ল্যাপটপ ঠিক আছে।

আমরা সকলেই জানি যে বহনযোগ্যতার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনারা ল্যাপটপকে ভালো মনে করবেন। কারন অবশ্যই ল্যাপটপ একটা হালকা পাতলা যন্ত্রবিশেষ আর অন্যদিকে একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার আকারে অনেক বড় এবং বহন করা একেবারেই সম্ভব নয়। এটাকে যদি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে হয় তাহলে অবশ্যই এর জন্য একটা ট্রাক ভাড়া করতে 😁😁 হবে, কি বলেন? যাইহোক তাহলে বহনযোগ্য তার ক্ষেত্রে ল্যাপটপ জিতে গেল। এবার চলুন দেখা যাক পারফরমেন্সের দিক থেকে ল্যাপটপ ভালো হবে নাকি কম্পিউটার ভালো হবে।

আসলে পারফরম্যান্সের দিক থেকে যেহেতু দুটোই একটা বৈদ্যুতিক যন্ত্র তাই এক্ষেত্রে - যে বেশি বৈদ্যুতিক সুবিধা পাবে অর্থাৎ ভালো বিদ্যুৎ প্রবাহ পাবে এবং যথেষ্ট পরিমাণ বিদ্যুতের সরবরাহ পাবে সেই যন্ত্রটি ভালো চলবে এটা বলা বাহুল্য। আর একটা কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপই হোকনা কেন, সবগুলোতেই প্রচুর পরিমাণে ছোট-বড় অনেক যন্ত্রাংশ রয়েছে, আর এর প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশই বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত হয়।


তবে যেহেতু ল্যাপটপ ব্যাটারি চালিত তাই এটা ফ্যাক্টরি থেকে তৈরি করার সময়ই এর প্রত্যেকটা যন্ত্রাংশের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়া হয়। হ্যাঁ,হতে পারে একই Core i3 Desktop এবং এই একই Core i3 এর Laptop হলেও এদের কার্যক্ষমতায় আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকবে। কেননা যেহেতু ল্যাপটপের প্রত্যেকটা যন্ত্র চালিত হয় ব্যাটারি থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ থেকে।তাই একটা ব্যাটারির পক্ষে এতগুলো যন্ত্রাংশকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তাই ওই ল্যাপটপের জন্য যে যন্ত্র তৈরি করা হয় তাদের প্রত্যেককেই তাদের কার্যক্ষমতা কমিয়ে (Underclocked করে) দিয়ে তারপর ল্যাপটপ বানানো হয়। তাই সে ক্ষেত্রে আপনি যদি একই কনফিগারেশনের ও একই হার্ডওয়ারের একটা ল্যাপটপ এবং একটা কম্পিউটার কিনেন তাহলে সে ক্ষেত্রে এই দুইটার পারফরম্যান্সে থাকবে আকাশ পাতাল পার্থক্য। 

একটা ল্যাপটপ যতোটুকু পারফরম্যান্স দিতে পারবে তার জায়গায় একটা একই কনফিগারেশনের কম্পিউটার দ্বিগুণ পারফরম্যান্স দিতে সক্ষম।কেননা একটা কম্পিউটার সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্ত হয়ে ওই বিদ্যুতের সরবরাহ তার প্রত্যেকটা যন্ত্রাংশে সঠিক হারে করতে পারছে।আর তাই আপনাকে সে তার যন্ত্রাংশের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে দিতে পারছে। ফলে আপনি এর সর্বোচ্চ গতি উপভোগ করতে পারছেন।

যদিও ব্যাটারি চার্জে লাগিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে হয়তোবা সাধারণের তুলনায় একটু ভালো পারফরম্যান্স আপনি পেতে পারেন। তবে তার পরেও কম্পিউটারের সাথে তুলনা করার মতো নয়। আর পারফরম্যান্সের দিকে লক্ষ্য করতে গেলে আরেকটা বিষয় রয়েছে যে দীর্ঘ সময় ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনি যদি এরকম কোন কাজ করেন, তা সে যতই ছোট অথবা বড় হোক না কেনো, যদি আপনি ল্যাপটপের ক্ষেত্রে প্রায় এক থেকে দুই ঘন্টার অধিক আপনি ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনার ল্যাপটপ টা প্রচুর গরম হয়ে যাবে। আর যখন ল্যাপটপ গরম হয়ে যায় তখন এটা হ্যাং করতে শুরু করে,সার্ভিস স্লো হয়ে যায় অথবা স্লো কাজ করবে ল্যাপটপটা।

কিন্তু কম্পিউটারে ক্ষেত্রে আপনি যদি সারাদিনও ব্যবহার করেন এটা গরম হতে পারে তবে ল্যাপটপের তুলনায় অনেক কম গরম হবে।কারণ ল্যাপটপটা হচ্ছে কম্বাইন্ড অর্থাৎ যন্ত্রাংশগুলো একত্রিত করা।সেই ক্ষেত্রে এর গরম বাতাস বের করার পদ্ধতি টা ভালোভাবে কাজ করতে পারে না।যদিও অনেকে ল্যাপটপের নিচে আলাদা করে একটা পাখা কিনে নেয় যাতে ল্যাপটপ ঠান্ডা থাকে।কিন্তু মূলত এর মাদারবোর্ড এবং প্রসেসরটির যে অংশটা গরম হয় সেখানে কিন্তু বাতাসটা পৌঁছতে পারেনা, শুধু বাইরের অংশে বাতাস দিয়ে থাকে তাই এর ঠান্ডা করার উপায় টা বলতে গেলে একেবারে বাজে।


তবে কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এর যন্ত্রাংশগুলো কেসিং এর মধ্যে বেশ খোলামেলা ভাবেই লাগানো থাকে এবং যেই ফ্যান টা থাকে, ওটা সরাসরি মাদারবোর্ডে অথবা সম্ভবত প্রসেসর এর উপরে লাগানো থাকে যাতে করে গরম হাওয়া টা বের করে এগুলোকে ঠান্ডা রাখা যায়।তাই ডেস্কটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এটি বেশী উত্তপ্ত হয় না আ হতে পারে না কারণ এক্ষেত্রে গরম হওয়া বেশ ভালোভাবেই বের করে দিতে পারে।দীর্ঘক্ষন ব্যবহারের ক্ষেত্র কিন্তু ল্যাপটপের থেকে কম্পিউটার অনেক ভালো পারফর্মেন্স দিতে পারবে।কিন্তু এটা একটা ল্যাপটপের পক্ষে সম্ভব নয় সে যত দামি হোক না কেন।আপনি দীর্ঘক্ষন ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারবেন না হয়তো একটু কম দামি ল্যাপটপ এর থেকে বেশি দামি ল্যাপটপ একটু বেশিক্ষণ ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু কম্পিউটারের মত নয়।


এবার যদি বাজেটের কথায় আসি অর্থাৎ দামের ক্ষেত্রে আপনি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে খুবই ভালো মানের ডেস্কটপ কম্পিউটার পেয়ে যাবেন তবে ১০ থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে আপনি কিন্তু ল্যাপটপও পাবেন।কিন্তু ওই দশ পনেরো হাজার টাকার ল্যাপটপ থেকে আপনি যদি দশ পনেরো হাজার টাকার একটা আজেবাজে এন্ড্রয়েড মোবাইলও কিনেন তাহোলেও ওটা ভালো সার্ভিস দেবে আপনাকে।

আর আপনি যদি ভাল মানের ল্যাপটপ চান তাহলে সেখানে আপনাকে অন্ততপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ হাজারের মধ্যে খরচ করতে হবে তাহলে আপনি ওই পনের থেকে বিশ হাজার টাকার ডেস্কটপ কম্পিউটারের মতোই ভালো সার্ভিস পেতে পারেন।

তবে আবারও বলছি পূর্বের আলোচনাগুলো মাথায় রাখবেন।ল্যাপটপ ও ডেস্কটপের যন্ত্রাংশের পারফরম্যান্স কিরকম হয়।দামটা বড় বিষয় নয়। একই কনফিগারেশনের ল্যাপটপ-ডেস্কটপ কম্পিউটারের পারফরম্যান্স কিন্তু অনেক আলাদা হবে এবং দামও অনেক আলাদা হবে। 

সর্বোপরি আমি এই কথাটাই বলতে চাই যে আপনি যদি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে প্রথমে আপনি - 
  • কোন কাজের জন্য এটা কিনবেন সেটা খেয়াল রাখবেন
  • তারপর পারফরম্যান্স আপনি কেমন চান সেটা খেয়াল রাখবেন এবং
  • আপনার কি বহন করার মত জিনিস প্রয়োজন নাকি আপনি ঘরেই কাজ করবেন সবসময় এটাও খেয়াল রাখবেন

তারপর এই সবগুলো বিষয় মাথায় রেখে আপনার বাজেট কি পরিমান আছে সে অনুযায়ী আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন আপনি কি কম্পিউটার কিনবেন নাকি ল্যাপটপ কিনবেন।

আশা করি এই বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে আমি আপনার মনের বিভ্রান্তিগুলো বা কনফিউশন গুলো দূর করতে পেরেছি।আশাকরি আর্টিকেলটিও আপনার ভালো লেগেছে।যদি চান তাহলে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন আপনার ফেসবুক অথবা টুইটারে।আর অন্য কোন কিছু জানার থাকলে বা অন্য কোন বিষয়ে পোস্ট চাইলে আপনি আমার কমেন্ট বক্স এ কমেন্ট করতে পারেন।আর কমেন্ট বক্স সিঁড়ি দিয়ে কিছুটা নামলেই পেয়ে যাবেন।😁😁😁

ধন্যাবাদ!

Comments

  1. কোনো কিছু জানার থাকলে এখানে কমেন্ট করে জানাতে পারেন

    ReplyDelete

Post a Comment