ফাইভারে (Fiverr.com) কাজ পাওয়ার উপায় কি?
আসসালামু আলাইকুম।আমি নওশাদ হোসেন রাহাত, আজকে আলোচনা করব এমনই হাজার হাজার নতুন ফ্রিল্যান্সারদের প্রশ্নগুলো নিয়ে এবং চেষ্টা করব তাদের প্রশ্নগুলোর কাঙ্খিত উত্তর দেয়ার জন্য।
😊 তাহলে চলুন শুরু করা যাক।এ করোনা কালীন সময়ে আমরা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে উদ্বুদ্ধ হচ্ছি, অনেকে উদ্যোগ নিয়েছি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য,আবার অনেকেই কাজও শিখেছি। আর ফিলান্সিং এর ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম জনপ্রিয় যে প্ল্যাটফর্ম গুলোর নাম মাথায় আসে,যেগুলোতে আমরা কাজ করার জন্য বিভিন্ন একাউন্ট খোলে থাকি,তাদের মধ্যে রয়েছে ফাইভার (fiverr.com), ফ্রীল্যান্সার (freelancer.com), আপওয়ার্ক (upwork.com), পিপল পার আওয়ার (peopleperhour.com) ইত্যাদি।
এদের মধ্যে ফাইভার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আর আমাদের দেশের অনেকেই প্রথম প্রথম এই ফাইবারের যোগ দেই।তবে যোগ দেয়ার বা একাউন্ট খোলার মাসখানেক বা দুই তিন মাস অথবা তার চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও যখন কাজ পাওয়া যায় না তখনই আমরা অধৈর্য হয়ে পড়ি এবং একটা সময় আমরা হাল ছেড়ে দেই এবং ভাবি যে হয়তো আমার ধারা এখানে কাজ করা সম্ভব হবে না।
কারণ যখন পাঁচ-ছয় মাস অথবা বছর অথবা অনেকের ক্ষেত্রে তারও বেশি সময় লেগে যায় কোন কাজ পেতে তখন এই সময়টা আমাদের খুবই খারাপ কাটে এবং কাটে নিরাশায়।তাই এরকম অধিক সময় ব্যয় করার পরেও যখন কাজ না পায় তখন অনেক নতুন ফ্রিল্যান্সারদের মাথায় এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতে থাকে যে -
- ফাইবারে কাজ পাবো কীভাবে? অথবা
- এখানে কাজ পাওয়ার উপায় গুলো কি কি? অথবা
- এখানে কোন নিয়মগুলো মেনে চললে বা কিভাবে অ্যাকাউন্ট খুললে অথবা গিগ তৈরি করলে এখানে আমি ভালো ভালো কাজের অর্ডার পেতে পারি?
# ফাইভারে একাউন্ট খোলার আগে যা যা প্রয়োজন
প্রথমে একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন যে আপনি যেকোন কাজেই যান না কেন,সেই কাজ সম্পর্কে যদি আপনার কোন দক্ষতা না থাকে তাহলে কিন্তু কেউ আপনাকে সেই কাজটা দেবেনা।আর ঠিক অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও যখন আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে যাবেন সেক্ষেত্রেও আপনাকে অবশ্যই এমন কোন কাজে দক্ষ হতে হবে অথবা অন্তত মাধ্যমিক পর্যায়ের দক্ষতা থাকতে হবে,যে কাজগুলো সচরাচর কেউ আপনার কাছ থেকে টাকা দিয়ে করিয়ে নিতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে সবচেয়ে বেশি অথবা বলতে পারেন শুধুমাত্র যে কাজগুলি হয়ে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে -
- লোগো ডিজাইন
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
- এন্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট
- ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট
- ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট
- ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন ডেভেলপমেন্ট
- ডাটা এন্ট্রি
- আর্টিকেল রাইটিং
- ওয়াবসাইটের এস ই ও
- ওয়েবসাইট ডিজাইনিং ইত্যাদি
আর কেবল তখনই আপনি fiverr.com , freelancer.com অথবা অন্যকোন ফ্রিল্যান্সার প্লাটফর্মে যোগ দেবেন।কারণ আপনার কোনো কাজ জানা থাকলেই কেবল আপনি কোন কাজ করতে পারবেন।
তাছাড়া আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি কথা বলায় এবং ইংরেজি তে মেসেজ করা বা চ্যাট করায় অন্তত এতোটুকু পারদর্শি থাকতে হবে যাতে,আপনার ক্লায়েন্ট আপনার কাছে কেমন কাজ চাচ্ছে সেটা তার কথায় বুঝতে পারেন।তার কাছ থেকে কাজ নেয়া এবং তাকে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার মতো ইংরেজি কথা বলার দক্ষতা আপনার থাকা লাগবে।কারন সব ফ্রীল্যান্সিং প্লাটফর্মেই আপনাকে বাহিরের দেশের লোকেদের সাথেই কাজ করতে হবে।তাই ইংরেজি জানা আবশ্যক।এমনকি আপনাকে ফাইভারে প্রথম গিগ তৈরি করতে হলে আপনাকে একটা ৪০ টিক চিহ্ন প্রশ্নের টেস্ট পরীক্ষা দিতে হবে এবং পাস করতে হবে।
আর হ্যাঁ এই ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা কাজের জন্যই আপনাকে অবশ্যই কম্পিউটার অথবা ভালো মানের ল্যাপটপ থাকতে হবে।কারণ মোবাইল দিয়ে আপনি এ সকল কাজের কোনটাই করতে পারবেন না তবে আর্টিকেল রাইটিং এর ক্ষেত্রে হয়তো আপনি মোবাইল দিয়ে করতে পারবেন যদি আপনার মোবাইলে টাইপিং ভাল হয় এবং দ্রুত হয়।তবে আমি এক্ষেত্রে আপনাকে গ্যারান্টি দিতে পারি না যে আসলেই আপনি করতে পারবেন কিনা।এটা সম্পূর্ণই আপনার ব্যাপার তবে কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ থাকলে আপনার জন্য হান্ড্রেড পার্সেন্ট 100% সহজ হবে কাজটা করতে।
আর হ্যাঁ,আপনার অবশ্যই বাড়িতে ওয়াইফাই অথবা ব্রডব্যান্ড অথবা আপনার সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা থাকতে হবে।কারন এই সকল কাজই আপনি করবেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে,তাই যদি আপনার কোনো সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে কিন্তু আপনার পক্ষে কাজটা করা সম্ভব হবে না।আচ্ছা এতোটুকু তো হলো শুধু ফাইভারে বা অন্য কোন ফ্রীলান্সিং প্ল্যাটফর্মের যোগ দেয়ার পূর্বে আপনার কি কি প্রয়োজন।
এবার আমরা আলোচনা করবো যে আমাদের কি ভুলগুলো হয় যার দরুন আমরা অনেকেই যে কাজ করতে চাই সেই কাজগুলো পাইনা,সেই সম্পর্কে।
# প্রোফাইল তৈরীতে ভুলসমূহ
আমরা অনেকেই নতুন নতুন ফাইবার একাউন্ট খোলার পর আমাদের প্রোফাইল গুলো এডিট করি বা ম্যানেজ করি।তবে সে ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই জানি না যে আমাদের ফাইভার এর প্রোফাইল গুলো কিভাবে ম্যানেজ করতে হবে।আর ঠিক এই জায়গাটাতেই আমরা সবচেয়ে বেশি ভুল করি।কারণ প্রোফাইল এডিট করার সময় একটা অংশে আমরা আমাদের যেই স্কিল গুলো অথবা যে দক্ষতা গুলো রয়েছে সেগুলো অ্যাড করে থাকি।
আরো পড়ুনঃ
আর অনেকেই না জেনে অথবা ইংরেজি বুঝতে না পারার কারণে অথবা অনেকেই ওভারস্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে এমন কিছু স্কিল বা দক্ষতা তালিকাভুক্ত করে দেয় যার দরুন সে যে কাজ পারে তার চেয়ে বেশি যে কাজ পারেনা ওই আজেবাজে সব দক্ষতা বা স্কিল গুলো দিয়ে রেখেছে যা সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই সেই সকল কাজও তার বায়ার রিকোয়েস্ট এর মধ্যে এসে পরে।এর ফলে দেখা যায় যে সে কাঙ্খিত কাজের পরিবর্তে এমন কিছু কাজ পাচ্ছে যেগুলো তার করার যোগ্যতা ও দক্ষতা কোনটাই নেই।
তাই আমাদের অবশ্যই প্রোফাইল এডিট করার সময় ফাইবারের যে skill গুলো রয়েছে সেটা বুঝে শুনে আমরা যে কাজগুলো পারি শুধু সেই স্কিল গুলোই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।আমি নিজে কিছু স্ক্রিনশট দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি যে কোনগুলো স্কিল এবং কোথায় এগুলো আপনি এডিট করতে পারবেন,ডিলিট করতে পারবেন এবং অ্যাড করতে পারবেন।
আপনার ফাইভার প্রোফাইল পেইজের নিচের দিকে বাম পাশে স্কিল সেকশনটা পাবেন যেখানে আপনি আপনার দক্ষতাা গুলো অ্যাড করতে পারবেন যেমনটা উপরের চিত্রে দেখানো হয়েছে। এখানে আপনি "Add New" বাটনে ক্লিক সর্বোচ্চ ১৫ টি দক্ষতা তালিকাভুক্ত করতে পারবেন।এরপর ওই বাটনটি হাইড হয়ে যাবে।
এই স্কিল গুলোর উপর মাউস রাখলে দুইটা আইকন দেখাবে।একটা পেন্সিল আরেকটা ডাস্টবিনের মত।পেন্সিল আইকনে ক্লিক করলে এডিট করতে পারবেন এবং ডাস্টবিন আইকনটিতে ক্লিক করলে ওই স্ক্রিল টি ডিলিট হয়ে যাবে।এভাবে আপনার দক্ষতা অনুযায়ী আপনি প্রয়োজনীয় স্কিগুলো তালিকাভুক্ত করে আপনার প্রোফাইলটা ঠিক ভাবে ম্যানেজ করে নেবেন। এতে করে আপনাকে সেই কাজ গুলোই Buyer Request এ শো করবে যেগুলো আপনার দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত।
# গিগ তৈরীতে ভুলসমূহ
আশা করি আপনি ফাইভার গিগ (Gig) সম্পর্কে জানেন।আপনি যে সার্ভিস গুলো বিক্রি করতে চাচ্ছেন সে গুলোকে ফাইবারে গিগ বলা হয়।ফাইভারে গিগ তৈরি করার সময় আমরা সার্চ ট্যাগের (Search Tag) এর ক্ষেত্রে অনেকেই ভুল করে এমন কিছু সার্চ ট্যাগ দিয়ে রাখি যা আসলে আমাদের কাজের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
তাহলে যখন অন্য কেউ কোনো কাজের জন্য ফাইবারের সার্চ করে তখন আমাদের গিগ গুলো সেখানে শো করেনা কারণ আমাদের যে গিগ গুলো রয়েছে তার সাথে আমাদের কাজের কোন মিল নেই।এই যেমন ধরুন আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করেন।তাহলে আপনাকে গিগ তৈরির সময় এমন কিছু সার্চ ট্যাগ ব্যাবহার করতে হবে যেগুলো আপনার কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।তাই যখন কেউ ফাইভারে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত কোনো গিগ সার্চ করবে তখন আপনার গিগ ও শো করতে পারে।টাই গিগ তৈরির সময় সঠিক সার্চ ট্যাগ দেয়ার দিকে খেয়াল রাখবেন।
আশা করি আপনি উপরের আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন যে ফাইভারে কাজ করতে হলে আমাদের কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হিবে,কি কাজ করতে পারবেন,কি কি পূর্বশর্ত রয়েছে ইত্যাদি।আর আপনি যদি এই বিষয়েগুলো যথাযথভাবে করেন,তাহলে অবশ্যই আপনি ফাইভারে কাজ পাবেন।
তবে একটা কথা ভাই।আপনি যতো অভিজ্ঞই হোন না কেনো,ফাইভার অথবা অন্য যেকোনো ফ্রীল্যান্সিং প্লাটফর্মেই হোক।আপনি যদি নতুন একাউন্ট খুলে থাকেন,তাহলে আপনাকে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে প্রথম কাজটা পেতে।আর এই সময়টা হতে পারে কয়েক মাস,অথবা ১ বছরও হতে পারে।তাই অবশ্যই আপনি অধৈর্য্য হবেন না।কারন যখন কোনো নতুন একাউন্ট খোলা হয়,তখন আপনাকে কেউ কাজ দিতে চাইলে দেখে যে একাউন্টটা কতোটা পুরোনো,সেলার লেভেল কতো,কোনো রিভিও আছে কিনা,ইত্যাদি।
তবে প্রথম কাজটা পাওয়া পর্যন্ত আপনাকে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে।কখনো হয়তো আপনার এরকমও মনে হতে পারে যে আপনার দ্বার হয়তো আর হবেনা।কিন্তু ভাই সত্যি বলছি যে আপনি হাল ছারবেন না।আপনি ইনশা আল্লাহ অবশ্যই কাজ পাবেন।এখন আপনার ভাগ্য ভালো হলে কম সময়েই কাজ পেয়ে যেতে পারেন।😀
আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করুক।ধন্যবাদ এবং আল্লাহ হাফিজ।
আর পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন।😀
কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানান
ReplyDelete